কুরআনের হাফেজকে যেভাবে ক্রসফায়ার দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা

সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাজিব হোসেন ২০১০ সালের দিকে কুরআনের হাফেজ এক ছাত্রদল নেতাকে কুরআন তেলাওয়াত অবস্থায় কিভাবে নির্মমভাবে ক্রসফায়ার দেয়া হয় তার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। রোববার (৯ মার্চ) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি ঘটনা বর্ণনা দেন। সুমনের সেই ক্রসফায়ার সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিল। সাংবাদিকদের এই লেখাটির আলোকে তথ্য অনুসন্ধান করার অনুরোধ জানান তিনি। স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, ২০১০ সালের শুরুর দিকে, ব্যরিস্টার তাপস হত্যাচেস্টার অভিযোগে, আমরা পাঁচজন সামরিক অফিসার তখন গোয়েন্দা হেফাজতে, কিন্তু আমাদের রাখা হয়েছে- ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স মেস বি’ এলাকায়। আমাদেরকে এরেস্টেড অবস্থায় রেখে, চলাচল সীমিত করে দেয়া হয়েছে। আমাদের সাথে সাধারণ অফিসার কেউ সাক্ষাৎ করতে আসে না। কেউ যদি সাহস করে চলে আসে, তার কাছে স্বাভাবিকভাবেই গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কারণ জানতে চায়। সিংহভাগ অফিসার এড়িয়ে চললেও, সুহৃদ সিনিয়র কিংবা কোর্সমেট এসে মাঝেসাঝে দেখে যায়। তিনি বলেন, একদিন এক ঘনিষ্ঠ ছোট ভাই সাক্ষাৎ করতে এলো। সে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিল। কিছু সময় কথা বলতে চায়। আমাকে খুব মহব্বত করতো। আমি আর ফুয়াদ সেই মেসে একটি কক্ষে থাকি। ডিউটিরত পাহারা অফিসারের অনুমতি নিয়েই শহীদ (ছদ্মনাম- বাস্তবে আমি এখন ওর নাম আর মনে করতে পারি না) আমার সাথে কথা বলতে আসে। ছেলেটা তখন মেজর। রাজিব আরো বলেন, কয়েক মাস আগে ঢাকার রামপুরাতে, সুমন নামের এক ছাত্রদল নেতাকে একটি সংস্থা তুলে নিয়ে আসে। ছেলেটার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা চলমান বলে জানানো হয়। সুমন দুর্ধর্ষ অপরাধী। কিন্তু গ্রেফতারের পর ভিন্ন চিত্র বের হয়ে আসে। খোঁজ নিতেই জানা যায়, সুমন আসলে ভিন্ন চরিত্র। এই সুমনের নামে থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি পর্যন্ত নাই। সে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছে এটা ঠিক। ব্যস এতোটুকুই। সুমনের পরিবারে মা ছাড়া কেউ নাই। মা ডায়াবেটিক রোগী। সুমন মায়ের সেবা করে। ছেলে গ্রেফতার হবার পর মায়ের ক্রন্দনে আকাশ বাতাস মুখরিত। তিনি সম্ভবত একটা ছোটখাটো সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। পত্রিকার সাংবাদিক এবং থানার মারফত নিশ্চিত হওয়া যায়, এটা ভুল মানুষকে গ্রেফতার। কিন্তু সুমনের মুক্তি মিলে না। এখানেই আমার সেই জুনিয়র অফিসারের কাহিনী যুক্ত। সুমনকে ক্রসফায়ার দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। গোয়েন্দা সংস্থার নেতৃত্বে, পুলিশ, র‍্যাবের উপস্থিতিতে সুমনকে ক্রসফায়ার দেয়া হবে। গল্প সাজিয়ে সে রাতে সুমনকে একটা গাড়িতে চোখ বেঁধে উঠানো হয়। সুমন ঘটনা উপলব্ধি করে বলেন ,”স্যার, আমার মায়ের দেখভাল করার মতো এই দুনিয়াতে কেউ নাই। আমার মা মরে যাবে স্যার। আমাকে সম্ভব হলে ছেড়ে দেন।”গাড়ি থামে না। সুমন এক পর্যায়ে নিশ্চিত হয়, বাঁচার রাস্তা নাই। সে তখন কুরান তিলওয়াত শুরু করে। উল্লেখ্য, সুমন একজন কুরানে হাফেজ ছিল। নিজেকে শান্ত রাখতে সুমন কুরান তিলওয়াত চালু রাখে। এর মাঝেই এক নির্জন স্থানে গাড়ি থামে। সুমনকে চোখ বেঁধে, পিছনে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে গাড়ি থেকে নামানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *